Gangani ।। গনগনি ।। The Grand Canyon of West Bengal (INDIA)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
অনেক দিন ধরেই প্ল্যান করছি, একটু দূরে কোথাও যাব। সমস্যা হচ্ছে, একাতো যাব না, যাব কোন বন্ধুর সঙ্গে, এতে খরচা কিছুটা বাঁচবে। এই ভাবে ঠিক করতে করতে গত ১৬.১২.২০ তে দুই বন্ধু মিলে বেরিয়ে পড়লাম। ও হ্যাঁ, তার আগে, ঠিক করে নিয়েছিলাম, কোথায় যাব। ঠিক হল যাব Gangani ও বিষ্ণুপুর। ফেরার পথে জয়রামবাটি ও কামার পুকুর।
ঠিক হল এবার আর আমার ডেরা কাকিনারা থেকে নয়। বন্ধুর বাড়ী বীরাটি থেকে। এতে একটা সুবিধা হল, আমরা ১ ঘণ্টা মত এগিয়ে থাকব। সেই মত আগের দিন রাতে বন্ধুর বাড়ী পৌঁছে গেলাম। যাব বন্ধুই বাইকে ১৬০ এর পালসার। রাতেই ফুল ট্যাঙ্ক ভরিয়ে নিলাম। ১২ লিটারের ট্যাঙ্ক হলেও ৬৪২/- টাকাতে ফুল ট্যাঙ্ক হয়ে গেল, কারন ও আগেই নিজের জন্য কিছুটা তেল ভরে রেখেছিল।
ভোর ৩ঃ৩০ টায় অ্যালার্ম দিলাম। উঠে পরে প্রাতকৃত্ত স্নান সেরে ঠিক ৫ টা নাগাদ বেরলাম। তখন অন্ধকার। চারপাশ দিয়ে বড় বড় মালবাহী লরি ছুটে চলেছে। কুয়াশা একদমই ছিল না, তাই বাইক ছোটাতে কোন অসুবিধা হয়নি। যেহেতু বন্ধু বাইক চালাচ্ছিল তাই ওর ঠাণ্ডা লাগছিল, আর আমার ঠাণ্ডা লাগছিল আঙ্গুলে। কনকন করছিল। আবার মোবাইলএ ভিডিও করব, তাই গ্লাভস পড়িনি। এক সময় ও চালাচ্ছে, আবার একসময় আমি চালাচ্ছি। এই ভাবে চলতে চলতে একসময় আমরা কোলাঘাট ব্রিজের থাকে যখন ১৫-২০ মিনিট পিছনে, তখন সবে আলো ফুটল, কিন্তু কুয়াশা নেই। এইভাবে ১৫-২০ মিনিট চলার পর এলো কোলাঘাট ব্রিজ।সূর্যোদয় হচ্ছে। দাঁড়ালাম ৫-৭ মিনিট। সূর্যোদয়ের ছবি সঙ্গে আমাদের ছবি তুললাম। কিছুক্ষণ পর চলে এলাম কোলাঘাট। ঠিক যেখান থেকে দিঘার পথ বাঁক নিয়েছে, সেখানে দাঁড়ালাম। সকালের চা, বিস্কুট, কেক সহযোগে ছোট্ট টিফিন হল। তখন বাজে প্রায় সাতটা। ১৫-২০ মিনিট আমরা রেস্ট নিলাম, সঙ্গে বাইকের ইঞ্জিন। দেখলাম বীরাটি থেকে কোলাঘাট আসতে সময় লাগল প্রায় দেড় ঘণ্টা, আর কিলোমিটারে ৭৩ কিমি।
আবার চলল বাইক। জিগ্যাসা করে নিলাম কিভাবে যেতে হবে ডেবরা
টোল পর্যন্ত। প্রায় ৩৬ কিমি পর এলো ডেবরা টোল প্লাজা। বাইকের টোল নাই। পাশ কাটিয়ে এগিয়ে
চললাম। এই রাস্তায় আসার আগে কোন একটি ইয়উ টিউব ভিডিওতে দেখেছিলাম, বাইকাররা ডান দিকের
রাস্তা নিয়েছিল, ধরেছিল জঙ্গল মহলের পথ। আমরা খুঁজে পেলাম না। অনেককে জিগ্যাসা করলাম, Gangani কি ভাবে যাব? দেখলাম অনেকে নামই শোনেনি। তারপর স্থানীয় একজনকে জিগ্যাসা করাতে
বলল, আমরা যেখানে আছি, সেখান থেকে যেতে হবে চৌরঙ্গি, সেখান থেকে ডানদিকে। আমরা আবার
চলেছি, চলেছি তো চলেছি। অনেকক্ষণ চলার পর দেখলাম আমরা চলে এসেছি খড়গপুর চার মাথার মোড়ে।
সাইন বোর্ডে দেওয়া আছে, কোনদিকে খড়গপুর, কোনদিকে মুম্বাই, কোনদিকে মেদিনীপুর আর কোন
দিকে কলকাতা। আমরা নিলাম ডান দিক, মেদিনীপুর যে দিকে যায়।
লোকজনকে জিগ্যাসাবাদের জন্য দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ। এই সময় ঘটল একটা হাসির ঘটনা। আমি আমার মোবাইলে দেখছি, গনগনি আর মাত্র সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা, আর বন্ধুর মোবাইলে দেখাচ্ছে এখনও ৪ ঘণ্টা ২১ মিনিট। ব্যস বন্ধুর মাথা গরম। আমায় বলল আমার কি এনফিল্ডের ইঞ্জিন নাকি, এই ভাবে গেলে তো ইঞ্জিন কাঁধে করে নিয়ে যেতে হবে। বেশ জর দিয়ে বলল। আমিও কনফিউস। কি করব মাথায় ঢুকছে না। পরে পাশের দোকানদাড় বলল, একটু এগিয়ে যান এই রাস্তা ধরেই, প্রথমে পড়বে শালবনি, তারপর পড়বে গড়বেতা, সেখান থেকে পড়বে গনগনি। আবার ম্যাপ দেখা শুরু, আমিও দেখছি, বন্ধুও দেখল। এবার ওর মোবাইলে ঠিক দেখাল, আসলে আগের বার GPS দমদম থেকে ক্যল্কুলেশন করেছিল। যাক মাথা ঠাণ্ডা হল। এগিয়ে চললাম শালবনির দিকে।
এগোতে এগোতে এলো একটি শহরাঞ্চলের মত বেশ জমজমাট জায়গা। পেড়িয়ে এগিয়ে চললাম, বেশ কিছুক্ষণ আসার পর এক দোকানীকে খাওয়ারের দোকানের কথা জিগ্যাসা করাতে বলল, আগে রেল লাইনের আগে বেশ কিছু দোকান আছে, ঐখানে পাওয়া যাবে। পেলামও, দুইজনের জন্য ২০ টাকার ঘুগনি কিনলাম, রুটি ছিলই। এবার খেতে হবে, একটু ফাঁকা জায়গায় দাঁড়াব। এগোচ্ছই এগোচ্ছই, বেশ কিছুক্ষণ চলার পর দেখলাম একটা সাইন বোর্ড, আমলাগোঁড়া বনাঞ্চল। সঙ্গের দোকানটি বন্ধ। দুই বন্ধুতে মিলে ঘাতি গাড়লাম, মিনিট ১০-১৫ এর জন্য। রুটি খাওয়া হল, তখন বাজে ১০ টা। খাওয়াও হল, ইঞ্জিনও খানিকটা বিশ্রাম পেল। তবে একটা কথা কি, সারা রাস্তাতেই ধুলো।
খাওয়া শেষ। আবার চললাম, এবার এলো গড়বেতা। জিগ্যাসা করলাম Gangani কি ভাবে যাব? বলল রসকুণ্ডের মোড় থেকে বাঁ দিকে বেঁকে যাবেন। ল্যান্ডমার্ক হিসাবে বলল একটি শিব মন্দির আছে। পৌঁছে গেলাম শিব মন্দিরে। বাঁ দিকে যাব, মন্দিরের ফটো তুললাম। কাছেই দেখলাম CIVIK VOLENTIER, কোথায় যাচ্ছি জানতে চাওয়ায় জায়গার নাম বললাম। তারা বলল আগের মোড় থেকে বাঁ দিক দিয়ে গেলে সুবিধা, খুব একটা খুঁজতে হবে না, আর আমরা যে রাস্তাটি দিয়ে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছিলাম, তাতে অনেক খুঁজতে হল। আরও মিনিট দশেক পাকা-কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে পড়ল একটি ১ মিনিটের ছোট জঙ্গল, পেরিয়েই পৌঁছে গেলাম “Gangani”। আহা, উপর থেকে দেখলে এক পলকেই ভাল লেগে যায়। একটা জিনিস দেখলাম ডেবরা থেকে গনগনি ৮০ কিমি, আমরা থেমে থেমে চালিয়েছি, সময় লাগল প্রায় আড়াই ঘণ্টার কাছাকাছি।
দেখলাম সার দিয়ে বেশ কিছু গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। আমরা পউছালাম বেলা ১১ টা নাগাদ। প্রথমেই মনে হল দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দেখলাম এখানে খাওয়ার হোটেল বলে কিছু নেই। শুধু পাশাপাশী দুটি দোকান রয়েছে। তার প্রথমটি তে জিগ্যাসা করলাম, কি রাকম কি দাম আছে। উনি সব্জি ভাত থেকে মাংস ভাত সব কিছুরই দাম বলে দিলেন। ডিম ভাত ৬০ টাকা, মাছ ভাত ৯০ টাকা, মাংস ভাত ১৫০ টাকা ইত্যাদি। আমরা মাছ ভাতের কথা বলে ঘুরতে চলে গেলাম। বলে গেলাম ১২ টা থেকে ১২ঃ৩০ এর মধ্যে আসব। উপর থেকে নদীটিকে দেখতে ও তার চারপাশের দৃশ্য সত্যি নায়নাভিরাম। একবার দেখলেই ভাল লেগে যাবে। নিচে নামার সিঁড়ি আছে, নেমে চললাম। দেখলাম সিঁড়ি গুলো খুবই খাঁড়াই। আপনারা গেলে অবশ্যই দেখে নামবেন, সেটা বলাই বাহুল্য। দেখলাম মাটি পুরো লাল। ঢীড়ে সুস্থে নীচে নেমে গেলাম দুই জনে। জায়গাটা কোথাও চড়াই, আবার কোথাও উঠরাই। দেখলাম বয়স্করাও নেমেছেন, আবার গাছপালা ঘাস ধরে উঠেও যাচ্ছেন।
আমরাও বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের এই GRAND CANYON কে উপভোগ করতে লাগলাম
(সব চেয়ে ভাল বোঝা যাবে ভিডিও আর ছবিতে, বলে বা লিখে অত টা বোঝানো যাবে না)। দেখলাম
দু-তিনটি গুহার মত, কিন্তু গুহা নয়। এই জায়গাতে সব জায়গায় কিন্তু জঙ্গল নেই। যদিও বোঝা
গেল যে দিকে সচরাচর কারর পা পরে না সেই দিকে জঙ্গল বেশী। একদল দেখি পিকনিক করতে বসে
গেছে। এখানে বেশ কিছুটা জায়গা খাঁড়ি মত আছে। আমরা জায়গাটিকে চারপাশ থেকে পরিক্রমণ করে
গেলাম নদীর তিরে। এটি শিলাবতী নদী। দুই-এক মিনিট কাটিয়ে উপরে চলে এলাম। তখন বাজে ১২
টা। আর মিনিট দশেকের মধ্যে ভাত চলে এলো। খেয়ে নিয়ে আমি চললাম উপরের এদিক সেদিক দেখতে।
চারপাশটা দেখে প্রায় ১ টা নাগাদ চললাম বিষ্ণুপুরের দিকে।
আমাদের যাওয়ার ভিডিও টি এখানে দিলাম, দেখবেন, ভাল লাগবে অবশ্যই। আমি আপনাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেখানোর চেষ্টা করেছি। আশাকরি ভাল লাগবে -
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন