Darjeeling Tour ( Part - 2 )
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
গত পর্বের লিঙ্ক - https://travellingsourav.blogspot.com/2022/04/Darjeeling-Mall%20Road-Mahakal%20Temple.html
দ্বিতীয় দিন(১৮/১০/২১)ঃ ৬ঃ৩০ টার সময় অ্যালার্ম দেওয়া ছিল। উঠে পড়লাম। মনে বেশ আনন্দ লাগছিল। বাইকে করে পাহাড়ের কোলে বেড়াব। বাইকের দোকানের লোকটা বলে দিয়েছিল ৮ঃ৩০ টা নাগাদ আসতে, তখন আমাদের ভাড়া করা যে বাইক টা অন্য লোকে নিয়ে গেছে সে দিয়ে যাবে। আমরা সকালের প্রাতঃরাশ খেয়ে ধীরে সুস্থে এগিয়ে চললাম বাইকের দোকানের দিকে। প্রাতরাশ হিসাবে আমরা খেলাম লুচি সঙ্গে আলু-র তরকারী।এবার চলেছি ম্যালের দিকে। দোকানের কাছে চলে এলাম,দেখি দোকান খোলে নি।সময় এখনও একটু বাকি আছে। কাছেই ঘুরতে লাগলাম।হাল্কা বৃষ্টি নামল, পাহাড়ি রাস্তায় বাইক চালাব, এই ভেজার মধ্যে, ভাবলেই একটু একটু ভয় করছে। আরও আধ ঘণ্টা কেটে গেল।দোকান খোলার নাম নেই। ফোন করলাম, ওনারাই জিগ্যাসা করল, যে বাইকটি তে আমরা যাব সেটি এসেছে কি না।এখনো আসেনি। আমার বন্ধু টি কে বললাম, অন্য বাইক নিয়ে চ, সে ও যাবে না, নাছোড়বান্দা, সে হিমালয়ান-ই চালাবে। এদিকে আমার মাথা গরম হতে শুরু করেছে। বন্ধু-টির উপড়েও আর সেই অচেনা বাইক নিয়ে যাওয়া লোকটির উপড়েও।কিছুক্ষণ পর বাইক নিয়ে লোক টি এলেন এবং যাদের বাইক তারা একবার পুরো গাড়ী চেক করে নিলেন। আমাদের যাত্রা শুরু হোল পৌনে ১২ টা নাগাদ। দেখলাম বাইকে অনেকটা তেল আছে। আমরা আর তখনকার মত তেল ভরাইনি।যারা বাইক ভাড়া দিয়েছিলেন তারা আমাদের একটা রুট প্ল্যান দিয়ে দিয়েছিলেন, যে আপনারা এই ভাবে ঘুরে সব কিছু দেখে নিতে পারেন।আমরাও তার দেওয়া রুট ম্যাপ ফলো করে চলতে লাগলাম।
সবচেয়ে প্রথমে আমরা চলে এলাম Darjeeling Zoo তে । এখানকার সময় সকাল ৮ঃ৩০ টা থেকে বিকাল ৪ টে। জন প্রতি নেয় জন প্রতি ৬০/- টাকা করে টিকিট।ঢুকলাম, দেখি বোর্ডের মধ্যে পথ নির্দেশিকা দেওয়া আছে, কোন দিকে কি কি প্রাণী আছে। আমরা একবার সেই দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে চললাম সব জন্তু জানোয়ার দেখতে। একে একে নিলগাই, হরিন, ব্ল্যাক প্যান্থার ইত্যাদি আরও অনেক প্রাণী দেখে আমরা চলে এলাম পাখিদের খাঁচার কাছে, বেশ বড়, পাখিরা নির্বিবাদে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ডাকাডাকি করছে। এটা দেখে আমরা এগিয়ে চললাম একটি মিউজিয়ামের দিকে। এখানে বিভিন্ন ধরনের পাখি, জীবজন্তু-র দ্যমি রাখা আছে।এই জায়গাটি দুই তলা।এটি দেখে আমরা চলে এলাম যেখানে রেড পাণ্ডা রাখা আছে সেখানে।দেখি তারা গাছের উপর উঠে ঘুমাচ্ছে। আরও এগিয়ে চললাম। হনুমান বিশাল আকারের বিড়াল, সাপ এই জাতিও আরও কয়েক্ টি প্রাণী দেখে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম।আমরা এখানে প্রায় ১ ঘণ্টার কাছাকাছির মত সময় কাটিয়েছিলাম।আমাদের বাইকটি রেখেছিলাম চিড়িয়াখানার বাইরে, এক জায়গায় যেখানে আরও অনেক বাইক দাড় করানো ছিল।এবার আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য হল চা বাগান।কমবেশি ১৫-২০ মিনিট সময় লাগল আমাদের চা বাগানে যেতে। Darjeeling Zoo তে থাকার সময় অল্প করে বৃষ্টি হয়ে গেছে।রাস্তা ভিজে। Tea Garden ঢুকে চারপাশ কুয়াশাচ্ছন্ন দেখলাম। আন্দাজে পরিমাপ করতে না পাড়লেও হয়ত ১ কিমির কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে, দূরেতো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেন রোড থেকে নীচে নেমে এলাম, বাগানের মধ্যে কিছুটা নীচে। বাইক বাইরে দাড় করান আছে, যেখানে সবাই গাড়ী রেখেছে সেখানে।কিছুক্ষণ ঘোরা ফেরা করলাম, আর ভগবানকে ডাকতে লাগলাম আকাশ পরিস্কার হয়ে যাওয়ার জন্য।ভগবান আমাদের কথা শুনলেন, মিনিট ১০ পরে আকাশ পুর পরিস্কার, সামনের দৃশ্য পুর দেখা যাচ্ছে, মনে কি আনন্দ, কি মজা। ফটাফট কতগুলো ছবি তোলা হয়ে গেল।দেখলাম চা বাগানের মধ্যে দু-একজন বিভিন্ন জিনিষের দোকান দিয়েছে। আমার বন্ধুটি কি একটা যেন কিনল, আমি আর সেদিক ফিরে তাকাই নি।এবার যাব পিস প্যগোডা দেখতে।যেতে যেতে ঐ পথেই পড়ল ‘Tenzing Rock’।
এখানে সবাই আসে অল্প করে পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে।আমরা আর ভিতরে যাই নি।বাইরে থেকে দেখেই এগিয়ে চললাম। এবার শহরে ঢোকার ঠিক আগে এক জায়গায় গিয়ে চোখ আটকে গেল।কি দারুন প্রাকৃতিক দৃশ্য।মিনিট দশেক এখানে দাঁড়ালাম, প্রকৃতিকে এনজয় করলাম।আবার এগিয়ে চললাম।রাস্তা সত্যিই মন ভোলানো।একবার ভুল পথে গিয়ে আমাদের ৫০ টাকা মিষ্টি খাওয়ার জন্য দিতে হল পুলিশ-কে। তারপর প্রায় আধ ঘণ্টার পর গিয়ে পউছালাম “Peace Pagoda”-র কাছে।এখানে একদিকে রাখা হয় চার চাকার গাড়ী অন্য দিকে রাখা হয় দুই চাকার গাড়ী।বাইকের জন্য কোন ভাড়া দিতে লাগেনি, তবে চার চাকার জন্য দিতে হয় কিনা তা আর জিগ্যাসা করা হয়নি।আমরা থামার পরেই আবার বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে গেল। রেনকোট সঙ্গে নিয়েছিলাম আর ছাতাও।রেনকোট পরে ফেললাম। শুধু মোবাইলে ফটো তুলব বলে ছাতা খুললাম।উঠেই দেখলাম সামনে রয়েছে “বুদ্ধা টেম্পল”, বাইরে থেকেই দেখলাম, তারপর এগিয়ে চললাম Peace Pagoda - র দিকে। চারপাশে কুয়াশা, তার মধ্যে বৃষ্টি হয়েই চলেছে।কয়েকটা সিঁড়ি উঠেই দেখতে পেলাম সেই প্যগোডা, একদম সাদা, গম্বুজ আকৃতির, সামনে বুদ্ধ দেবের মূর্তি।চারপাশ পুরটা একবার ক্যমেরা বন্দি করে নিলাম।এবার নামতে লাগলাম।দুপুরে কিছু খাইনি।আগে খাব, তারপর বাকি জায়গায় যাব।কিন্তু কাছাকাছি সব দোকান দেখলাম বন্ধ। চললাম অন্য জায়গায়। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে আবার চলতে শুরু করলাম। এবার যাব “Rock Garden”। কিন্তু পথে যা ভিড়, আর প্রচণ্ড জ্যাম, তারপর পথ অর্ধেক ভাঙ্গা। একেবারে তালেগোলে হরিবোল। আর রাস্তার যা অবস্থা হয়েছে, পাহাড়ি পথ ধরে নামতে গেলে হ্রিথকম্প ধরে যাবে। যাইহোক, আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগলাম।এক্ সময় ডান দিকে মোড় নিয়ে নীচে নামতে লাগলাম। বাইকের পিছনে বসেছি, বন্ধুকে শক্ত করে ধরে আছি, আর সে শুধু আশ্বাস বানী দিচ্ছে – তোর কোন ভয় নেই। ভাল কথা।এর আগেও আমি পাহাড়ি রাস্তায় ঘুরেছি, কিন্তু এই রকম খাঁড়াই রাস্তা কোথাও দেখিনি। এই ভাবে লোকালয়ের ভিড় ছেড়ে আমরা ঢুকে পড়লাম একদম শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে। কিছুটা নেমে আসার পরে আমরা দাঁড়ালাম চারিপাশ সবুজে ভরা শান্তস্নিগ্ধ পরিবেশে। মাঝখান দিয়ে পিচের রাস্তা চলে গিয়েছে।
এখানেই আমরা প্রায় ৫ মিনিটের উপর কাটিয়ে দিলাম। তারপর আবার গাড়ীর ইঞ্জিনে স্টার্ট দেওয়া হল। এগিয়ে চললাম গন্তব্বের দিকে। কিছুক্ষণ এগিয়ে চলার পর দেখলাম একটি চা বাগান, থামলাম, তবে রক গার্ডেন কোন দিকে সেটি জানার জন্য।শুনলাম দুটি পথ আছে। তবে এক দিকের পথের অবস্থা খুব খারাপ, তাই ভাল পথ টি আমরা নিলাম।কিছুদুর যাওয়ার পর দেখি সেটি আবার দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে, জিগ্যাসা করে দেখলাম বাঁ দিকের পথ দিয়ে যেতে হবে। তবে একটা কথা এই পথের শোভা সত্যি অতুলনীয়। চলতে চলতেই দেখলাম মেঘ এখনো আছে, তবে বৃষ্টি একদম বন্ধ।এবার আমরা চলে এলাম রক গার্ডেনের কাছে, সারি সারি গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। তবে বেশীর ভাগই চারচাকা, দুই চাকা খুব কম। প্রথমে হেঁটে এসে বাইরে থেকে পুরোটা একবার দৃষ্টিগোচর করে নিলাম। একপলকে বেশ ভালই লাগল।এবার টিকিট কাটার পালা, টিকিট নিল জনপ্রতি ২০/- টাকা করে, ৫টায় Rock Garden বন্ধ হয়ে যায়।তখনও ১ ঘণ্টার মত বাকি।সিমেন্ট বাধানো পথে উপরে উঠতে লাগলাম। চারপাশে রংবেরঙের ফুল গাছ লাগান।বসার জন্য চেয়ার পাতা, আবার পশুপ্রাণীর স্ট্যাচু করা আছে। আরও উপরে উঠতে লাগলাম, পাশ দিয়ে চলেছে সেই ঝর্না।ছোট হলেও আওয়াজ বেশ। কোথাও কোথাও আবার ঝর্ণার উপর দিয়ে পথ তৈরি করে দেওয়া আছে। উপর থেকে চারপাশ আরও ভাল লাগছিল দেখতে।সেখান থেকে চারপাশের দৃশ্যের ছবি ভিডিও তুলে নিলাম মোবাইলে।এবার নীচে নামার পালা।
যেতে হবে সেই ম্যালের কাছে আমাদের হোটেলে। আপনারা জানেন পাহাড়ে ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে যায়, অচেনা পথ, তাই আর রিস্ক নিলাম না।বেড়িয়ে পড়লাম। এবার উপরে ওঠার পালা। প্রায় আধ ঘণ্টা বা তার কাছাকাছি সময়ে পৌঁছে গেলাম সেই জনাকীর্ণ লোকালয়ে।কিছুদূর এগোতেই আবার সেই ভিড়। তবে এবার দেখা হয়ে গেল পাহাড়ের সেই ছোট্ট আকর্ষণ ট্রয় ট্রেন-এর সঙ্গে, হুইসেল দিতে দিতে, ঝিক ঝিক করে আসছেন। তিন-চারটি কামড়ার ব্যাপার।আবার চলা শুরু হল, দেখলাম তেল শেষের দিকে, ভরানো হল ৩০০/- টাকার তেল। সোজা চলে এসেছি ম্যালে। দোকানে বাইক জমা দিলাম। কথা হয়ে রইল কাল সকালে নিয়ে আবার ১২ টা নাগাদ ফেরত দিয়ে যাব, কারন কিছু পয়েন্ট দেখা বাকি আছে। ম্যাল রোড ধরে ফিরতে ফিরতে মুখ চালালাম। হোটেলের কাছে আসতেই আবার শুরু বৃষ্টি। টিপ টিপ করে শুরু হল।হোটেলে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। ১ ঘণ্টা পরে নীচে নামলাম টিফিন খাব বলে। টিফিন খেয়ে বেরলাম শেয়ার গাড়ী যেখান থেকে ছাড়ে সেখানে। দেখলাম বন্ধ হয়ে গেছে, এখানে বিকাল ৪ টা নাগাদ নাকি সব বন্ধ হয়ে যায়। ফিরে এলাম হোটেলে, তখন বৃষ্টি বেশ জোরে শুরু হয়ে গেছে। আমরা ঠিক করে রেখেছিলাম আগামী কাল আমরা যাব কালিম্পং তিস্তা বাজারে। ওখানে তিস্তা নদীর ধারে ক্যাম্পিং করব আর তিস্তার জলে র্যাফটিং।সেই মত আমরা সেই ক্যাম্পিং ও র্যাফটিং যিনি প্রস্তুত করেন (নাম অজায় বিশ্বকর্মা) তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তিনি বললেনও চলে আসতে। বেড়াতে আসার পর ও বাড়ির সাথে রোজই যোগাযোগ রাখতে হয়। ঘরে ঢোকার পর দেখি মা ফোন করেছে, খবরে দেখাচ্ছে সারা উত্তরবঙ্গ জুড়ে নাকি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে, থাকবে দুই তিন দিন মত। আমরা হোটেলে ঢোকার পর দেখি বৃষ্টি আরও জোরদার শুরু হল।আমরা ঘরে বসে আগামী দিনের যাওয়ার প্ল্যান সব করে রাখলাম, আর আজকের খরচার হিসাব করে ফেললাম।রাত ১০ টা নাগাদ রুটি সব্জি সহযোগে খেয়ে শুয়ে পড়লাম।বাইরে কান পেতে শুনলাম বৃষ্টির ঝাঁজ বেড়েছে।
আজ এই পর্যন্তই শেষ করলাম। তৃতীয় ও চতুর্থ দিন থেকে আগামী দিনে বলব।আজ আমরা দার্জিলিং এ ঘুরতে গিয়ে Darjeeling Zoo , Tea Garden, Peace Pagoda, ও Tenzing Rock এর যে ভিডিও গুলো তুলেছি তার মধ্যে কিছুটা এখানে দিলাম।আগামী দিনের জন্য Rock Garden সহ বাকিটা রেখে দিলাম। দেখে জানাবেন কেমন লাগল ঃ
পরবর্তী পর্বের লিঙ্ক - https://travellingsourav.blogspot.com/2022/05/heavy%20rainfall-.html
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন