Darjeeling Tour (Part - 1)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
অনেক দিন ধরেই প্ল্যান করছিলাম, Darjeeling যাব। কিন্তু কোন ভাবেই হয়ে উঠছিল না। আর যাও বা হল সেটাও
একেবারে বিরক্তিকর ও ভয়াবহ।কেন? তাহলে চলুন সেই গল্পে আস্তে আস্তে ঢোকা যাক।
২০২১, সবে দুর্গাপূজা
শেষ হয়েছে। একাদশীর দিন আমি আর আমার বন্ধু সম্রাট চলেছি দার্জিলিং। টিকিট প্রায় ৩ মাস
আগে কাটা হয়ে গেছে। কনফার্মও হয়েছে। রাতের দার্জিলিং মেল-এ উঠলাম। রাত ১০ঃ০৫ টার ট্রেন।
ঠিক সময় মতই ছাড়ল।রাতে খাওয়ার জন্য সম্রাট বিরিয়ানি এনেছিল।আমি নিয়ে গিয়েছিলাম লুচি ও তরকারী।
তাই দিয়েই পেট পুজ করে শুয়ে পড়লাম।তবে আপনাদেরকে একটা কথা বলে রাখা ভাল, আমরা টিকিট
কেটেছিলাম ২য় সিটিং এর।প্রথম বারের জন্য, কেমন লাগে দেখার জন্য।আর প্রথম বারেই এই রকম
যাত্রার জন্য ঘেন্না ধরে গেল।ঠিক মত বসা গেলেও শোয়া গেলনা সেভাবে, শুতে পারার কথাও নয়।দুই বন্ধু মিলে কিছুক্ষণ
করে ঘুমিয়ে নিলাম। শেষ যতটুকু মনে পরছে, আমি যেইবার ভিতর কনিকা যাই সেইবার চেয়ার কারে
গিয়েছিলাম, তাও এতটা কষ্ট হয়নি।তাই ট্রেনের দুলুনি খেতে খেতে কখন দুজনেই ঘুমিয়ে পরেছি
ঠিক মনে নেই। তবে মাঝে মাঝে বাইরে স্টেশনে মাইকের ঘোষণা শুনতে পাচ্ছিলাম।
প্রথম দিন(১৭/১০/২০২১) ঃ আমার যখন ৪ বছর বয়স তখন আমি প্রথম বাবা-মা’র কোলে করে Darjeeling যাই, সেই স্মৃতি আজ আর কিছুই মনে পরে না, শুধু এ্যালবামের পুড়নো দুই-একটা ছবি ছাড়া। আর আমার দুর্ভাগ্য এটাই যে, যেখানে বাঙ্গালীরা প্রায়ই যেতে ভালবাসে সেখানে আমি কিনা গেলাম এই বুড়ো বয়েসে। আমরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌছালাম নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর। আমরা দেখলাম দার্জিলিং মেল দাড় করিয়ে রেখে পদাতিক এক্সপ্রেসকে আগে ছেড়ে দেওয়া হল, কয়েকটি স্টেশন আগে। আমরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামলাম ঠিক সকাল ১০ঃ২৬ মিনিটে।আর আমাদের নামার কথা ছিল সকাল ৮ঃ১৫ টায়। এখানেই বেড়ানোর সময় থেকে ২ ঘণ্টা লস। এবার চললাম শেয়ার গাড়ি খুঁজতে।পেলাম ৫০০/- টাকা জনপ্রতি হিসাবে। আমরা সাধারণত জানি ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে গাড়ি পাওয়া যায়।কিন্তু এবার নিল বেশি। তাও লোকজন কম থাকার জন্য আরও ১ ঘণ্টা বসে থাকতে হল।১ ঘণ্টা বাদে গাড়ী ছাড়ল।গাড়ী আস্তে আস্তে শহুরে কোলাহল ছেড়ে সবুজ বনানীর দিকে এগিয়ে চলল, সাথে রাস্তার পাস দিয়ে চলতে লাগল আমাদের চেনা ট্রয় ট্রেনের লাইন। ১ ঘণ্টা চলার পর গাড়ী দাঁড়াল এক জায়গায়, আমাদের খাওয়ার জন্য। সকালের প্রাতঃরাশ হয়নি।পেটে হাতিতে ডন দিচ্ছিল, তাই আর বিন্দুমাত্র দেরী না করে দুই প্লেট মোমো, দুই প্লেট চিকেন চাউমিন ও দুই কাপ চা দিতে বললাম।খেয়ে এবার চললাম দার্জিলিং এর উদ্দেশে। চালককে জিগ্যাসা করলে তিনি জানাল যেতে সময় লাগবে ৪ ঘণ্টার কাছাকাছি।তবে আমরা যে পথে গেলাম, পরে অন্য একজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম, সেতা দার্জিলিং যাওয়ার উল্টো পথ, সবাই ঐ পথ দিয়ে নেমে আসে।যাইহোক, আমরা Darjeeling এ আমাদের একটা মোড়ের কাছে নামিয়ে দিল।
আমাদের হোটেলের ল্যান্ডমার্ক ছিল হোটেল রামাদা।আমাদের যেখানে নামিয়ে দিল সেইখান থেকে আমাদের হোটেল কাছে যেতে অচেনা পথ হওয়ার জন্য সময় নিল প্রায় আধ ঘণ্টার কাছাকাছি। আমাদের হোটেলের নাম ছিল ‘হোটেল ক্রিস্টাল’, কথা বলে নিতে পারেন কিরান শর্মা-র সাথে (মোবাইলঃ ৭৪৩০৮৩৮০৪৮/৯৫২৫৩১৬৬১২)। হোটেলটি রাস্তার থেকে একটু ভিতরে। হোটেল থেকে বাইরের ভিউ একদমই দেখা যায়না।আমরা আগে থেকে হোটেল বুকিং করে রেখেছিলাম থাকা-খাওয়া নিয়ে ১,১০০/- টাকা জন প্রতি।আমরা ঘরে ঢুকে হাত-পা ধুয়েই চললাম খেতে।আমরা পেলাম গরম গরম ভাত, ডাল, তরকারি ও অমলেট।যা খিদে পেয়েছিল, তাতে ২০ মিনিটে খাওয়া শেষ।ঘরে এসে অন্য জামাকাপড় পরে চললাম দার্জিলিং MALL এর দিকে। আমাদের হোটেল থেকে হেঁটে যেতে সময় লাগল প্রায় ১০ মিনিট মত।এসে দেখি লোকে লোকারণ্য। আমরা ম্যালে চারপাশ ঘুরে দেখছি, স্বাভাবিক, প্রথম দর্শন।এখন বৃষ্টি নেই, কিন্তু বেস ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। ঘুরতে ঘুরতে আমরা চলে এলাম ভানু ভক্ত-র মূর্তির কাছে। বসার জায়গা আছে ফটো তুললাম। চোখ পড়ল বাঁ দিকে। দেখলাম কুয়াশায় ঢাকা পাহাড় আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।এগিয়ে চললাম সেই দিকে। পাশের সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলাম, আরও কাছের থেকে দেখব বলে। দেখলাম একটা দোকান আছে, গরম গরম চা, কফি, মোমো, চাওমিন ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। দুই কাপ কফির জন্য বলে এদিক ওদিকের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে লাগলাম। চিনচিন আওয়াজ করে ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়তে লাগল। গাছের নিচে বসে আছি, ছাতার দরকার নেই। প্রায় ২০-২৫ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু কফির পাত্তা নেই।আবার বললাম, তৈরি হয়ে এলো, কিন্তু ঠাণ্ডা, তবে ঠাণ্ডা ওয়েদারের জন্য কিন্তু ঠাণ্ডা হয়নি, দিলই প্রায় ঠাণ্ডা, এবার দাম নিল ঐ দুই কাপের জন্য ৫০/- টাকা।ওকে, এবার ওখান থেকে উঠে চললাম, আসে পাসে ঘুরতে।
দিনের আলো এখনও
বেশ ভালই আছে। চললাম “MAHAKAL” মন্দিরের
পথে। ম্রিদুমন্দ হাওয়ায় পাহাড়ের সিমেন্ট বাঁধান পথে উঠে চলেছি মন্দিরের উদ্দেশ্যে। পথ
মোটামুটি, বয়স্কদের অসুবিধা হতে পারে। উঠে প্রথমেই গেলাম একটা শেড দেওয়া জায়গায়। এখানে
অনেকে জুতো খুলে রাখছেন, তারপর আরও উপড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এখানে কিছুখন থাকলাম। দেখলাম
একদিকে রয়েছে MAHAKAL এর গুহা, আর গেলাম না।এবার যাব উপরের মন্দিরগুলো দেখতে, কি আছে
সেখানে। উঠতেই চোখে পড়ল ছোট ছোট দুটি মন্দির একত্রে, এখানে আছেন সাইবাবা। আরও উঠলাম,
দেখলাম আছে দুর্গা মন্দির আর একটু এগিয়ে গিয়ে আছে শিব মন্দির। পুজা পাঠ চলছে।এখানে
পুরোহিতেরা সব পাহাড়ি, লাল ও গেরুয়া বসন পরিহিত। এখানে বেশ কিছুক্ষণ থাকলাম। দেখলাম
একপাশে যজ্ঞ হচ্ছে, হাওয়ায় সেই যজ্ঞের ধুয়া সারা দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে, আর মনে একটা ভক্তি
ভাবের সৃষ্টি করছে। এবার নীচে নামতে হবে। ঠিক যেই জায়গায়
বলেছিলাম জুতো খোলার জায়গা আছে, ঠিক সেই জায়গায় একটি ছোট পাইনের বন আছে, গাছগুলো বেশ
লম্বা।এখানে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু ফটো তোলা হল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, চারপাসের লাইট গুলো জ্বলে উঠেছে। ঠিক হল বাইকে করে ঘুরব।
দেখলাম ম্যালের পাশেই আছে ভাড়ার বাইকের দোকান। নাম ‘Amigoes Tour Travels’। বিভিন্ন
রেটের বাইক আছে। আমার বন্ধুর পছন্দ হল, রয়্যাল এনফিলডের হিমালয়ান।রেট ঠিক হল ১,৮০০/-,
সময় সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা। অগ্রিম হিসাবে দিলাম ১,০০০/- টাকা।স্লিপ দিল, বেড়িয়ে
এলাম।শুধু বন্ধুর আধার কার্ড জমা রেখে দিল।ঠাণ্ডা আছে, হাল্কা হাওয়া দিচ্ছে, লোকে লোকারণ্য,
আমরা চলেছি হোটেলের দিকের পথে।দুই পাশে অজস্র দোকানপাট বসেছে।আমরা খেলাম অল্প করে ছোলা
মাখা, পকৌরা আর এক কাপ করে কফি।ধীরে সুস্থে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম হোটেলে। বসলাম
সারা দিনের হিসাবপত্র নিয়ে। দেখতে দেখতে ৯ঃ৩০ টা বাজল, চললাম খেতে। রুটির সঙ্গে একটা
সব্জি ও চিকেন সহযোগে রাতের খাওয়া শেষ করলাম।একটু হেঁটে পৌনে ১১ টা নাগাদ শুয়ে পড়লাম।
আজ এই পর্যন্তই শেষ করলাম। দ্বিতীয় দিন থেকে আগামী দিনে বলব।প্রথমবার Darjeeling ঘুরতে গিয়ে যে ভিডিও গুলো তুলেছি তার একটা এখানে দিলাম। দেখে জানাবেন কেমন লাগল ঃ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন