Darjeeling Tour ( Part - 3 )
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
তৃতীয় দিন (১৯/১০/২০২১)ঃ আজ আমাদের হোটেল ছাড়ার পালা। আগের দিন খোঁজ নিয়ে জেনেছি সকাল ১১ টা নাগাদ কালিম্পং এর গাড়ী ছাড়ে শেয়ার গাড়ীর স্ট্যান্ড থেকে। সকালে উঠে গরম জলে স্নান সেরে নিলাম।ব্যাগ আগের রাতে কিছুটা গুছিয়ে রেখেছিলাম, আজ স্নান সারার পর বাকিটা কমপ্লিট করে নিলাম। বৃষ্টি কিন্তু সেই আগের রাত থেকে যে রকম মুষলধারে পড়ছিল তার থেকে একটুও কমেনি।হোটেলে দেখি বিভিন্ন জায়গা দিয়ে জল পড়ছে, মেঝে একদম ভিজে গেছে, খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হচ্ছে। আমরা হোটেলের ভাড়া মিটিয়ে, ব্যাগ গুছিয়ে নীচে নেমে এলাম। এবার প্রাতঃরাশ এর পালা। জল-খাওয়ার খেয়ে আমরা ছাতা নিয়ে চললাম শেয়ার গাড়ীর স্ট্যান্ড-এর দিকে।আমরা গিয়ে কত নম্বর গাড়ীতে উঠবো জেনে নিলাম।কিন্তু বৃষ্টির জন্য কোন গাড়ী-ই এসে হাজির হয়নি। প্রায় ১-দেড় ঘণ্টা দাঁড়ানোর পর গাড়ী গুলো আসতে শুরু করল। আমরাও গাড়ীতে উঠলাম।ব্যাগ গুলো সব গাড়ীর ছাদে বেঁধে নিল।গাড়ী চলতে শুরু করল। ভাড়া নিল জনপ্রতি ২৫০/- টাকা, তবে এটি বুকিং সেন্টার-এ দিতে হয়নি, দিতে হয়েছিল গাড়ীর চালক-কে। আমার আবার বদ্ধ গাড়ীতে বমি হয়, জানলার কাঁচ খোলার ইচ্ছে থাকলেও খুলতে পারিনি।বৃষ্টি তখনও মুষলধারে পড়ছে। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে অজয় বিশ্বকর্মা -কে ফোন করলাম যে আমরা বেড়িয়ে পড়েছি জানাব বলে।ও বাবা, উনি উল্টো সুর গাইতে লাগলেন, বলছিলেন না আপনাদের আসার দরকার নেই। তিস্তায় জল খুব বেড়ে গেছে। কিন্তু আমার ওনাকে জানালাম আমরা গাড়ীতে বসে অনেকটা পথ চলে এসেছি, ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।উনি ড্রাইভারের সাথে কথা বলে আমাদের তিস্তা বাজারে নামিয়ে দিতে বললেন।মাঝখানে কিছুক্ষনের জন্য বৃষ্টি একটু কমেছিল। জানলা খুলে সামান্য কিছুক্ষণ ভিডিও করে নিলাম।আবার কিছুক্ষণ চলার পরেই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি।এইভাবে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক চলার পর আমাদের গাড়ী একটি ছোট রেস্টুরেন্ট-এর কাছে এসে থামল, খাওয়ার জন্য। আমরা যে যে নেমে গিয়ে নিজেদের খাওয়ার জন্য বলতে গেলাম। দেখলাম এখানে বেশীর ভাগ লোক-ই মোমো খাচ্ছে। আমরা দুই প্লেট এগ চাউ এর জন্য বলে একটি টেবিলে বসলাম।দেখি সবার খাওয়া হয়ে অনেকেই গাড়ীতে ওঠার তোড়জোড় করছে, কিন্তু আমাদের খাওয়ার এখনো দিয়ে গেল না, এদিকে অল্প হলেও খিদে পেয়েছে। আমরা গিয়ে বলাতে দেখি আমাদের টেবিলে এসে দিয়ে গেল। বুঝলাম এরা নিজেদের জাতি গোষ্ঠীকে আগে দেখে, তারপর বাইরের লোককে। এখানে যারা কাজ করে তাদের চাউমিন এর দাম জিগ্যাসা করাতে ওনারা বলল মালিক বলতে পারবে। সন্দেহ হল, হয় এরা নতুন, না হলে কোন ব্যপার আছে।যাই হোক খাওয়া শেষ করে গেলাম দাম মেটাতে। দাম শুনে অবাক, আমাদের দেওয়া হয়েছিল হাফ প্লেটের একটু বেশি চাউ অথচ দাম নেওয়া হল ১০০/- টাকা প্লেট প্রতি। বুঝলাম গলা এরা ভালই কাটতে পারে। তাই আপনাদের কে একটা কথা বলে রাখি যে কেও যদি এই পথে আসেন তাহলে পেট ভরতি করে খেয়ে আসবেন তাহলে আর গলা কাটা যাওয়ার ভয় থাকবে না। এখানে আমরা প্রায় ১ ঘণ্টার কাছাকাছি থাকার পর আবার গাড়ীতে উঠে পড়লাম।
গাড়ীতে আরও পৌনে এক ঘণ্টা চলার পর এলো তিস্তা বাজার স্ট্যান্ড, একটি তিন মাথার মোড়। বৃষ্টি কিন্তু অনর্গল পরেই চলেছে থামার রেশ নেই।নেমেই অজয় বাবুকে ফোন। তিনি জানালেন আসছেন। মিনিট দশেকের মধ্যে উনিও ছাতা মাথায় হাজির আমাদের কাছে।ওনার চেনা একটি জায়গায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।আমরাও ব্যগপত্ত্র রেখে কিছুটা ফ্রেশ হয়ে ওনার সাথে কথা বলতে বসলাম একটি খাওয়ার হোটেলে। আমরা যেখানে থাকব তারা নিরামিস ভোজী, তাই সেখানে খাওয়া যাবে না।এবার আসা যাক আসল কথায়।ওনার সঙ্গে বসলাম কি ব্যপার জানার জন্য।বর্তমানে কি কি করা যেতে পারে তার জন্য।কিন্তু উনি যা বললেন তাতে আমরা ঘুরতে এসে ভেঙ্গে পড়লাম। প্রথম কথা তিস্তার ধারে ক্যম্পিং করে থাকা যাবে না, কারন, তিস্তাতে জল বেশি হয়ে ফুলে ফেপে উঠে একদম চড় পর্যন্ত চলে এসেছে।আর র্যাফটিং তো করাই যাবে না।তাও আমরা রেট সম্পর্কে জানতে চাইলাম। উনি বললেন ক্যম্পিং ও খাওয়া নিয়ে আমাদের লাগবে জনপ্রতি ১,২০০/- টাকা করে আর র্যাফটিং এর জন্য আলাদা করে। কিন্তু যখন দেখালাম র্যাফটিং করতেই পারব না তাই আর জিগ্যাসা করলাম না। ওনার সঙ্গে কথা বলার আগে আমরা খাওয়ার জন্য বলে দিয়েছিলাম। কথা শেষ হলে খেতে বসলাম, সব-ই গরম গরম। খেলাম পেট পুরে। কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম কিছু পুরানো খাওয়ার গরম করে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।দুপুরের খাওয়ার খেতেই আমাদের প্রায় বিকাল হয়ে গেল। এদিকে বৃষ্টি তার তেজ আরও বাড়িয়েছে।সন্ধ্যা যত আসছে বৃষ্টির সাথে বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে।এখানে এসে আর কোথাও বেরনো যায় নি। সন্ধ্যা বেলাতে চা, স্নাক্স খেয়ে আবার ঘরে।কিছু করার নেই, খাচ্ছি আর শুয়ে শুয়ে দুই বন্ধুতে গল্প করছি।রাতে ৯ঃ৩০ টা নাগাদ খেতে বেরলাম। যার যা ইচ্ছে, যে রুটি খাবে শে রুটি, যার ভাত খাওয়ার ইচ্ছে আছে তার ভাত। সঙ্গে ছিল আলু ফুলকপি ও পনীরের তরকারি।বৃষ্টি তখনও ঝমঝমিয়ে হয়ে চলেছে।আজকের মত রাত পৌনে ১১ টায় ঘুমতে গিয়ে ইতি টানলাম।
চতুর্থ দিন (২০/১০/২০২১) - কাল রাতেই খবর পেয়েছিলাম গরুবাথানের কাছে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি হয়েছে, যা অনেকের কাছেই ভয়ের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিস্তা বাজারের কয়েক কিমি আগে বড়সড় ধস নেমেছে।যারা বেড়াতে গিয়েছিলেন তারাও সব নেমে আসছেন। সব গাড়ীই রিসার্ভ। আমরা চিন্তায় পরে গেলাম গাড়ী পাব কোথা থেকে। আমরা অজয় জি কেও বলে রাখলাম গাড়ীর কথা।তবে আশার কথা একটাই যে বৃষ্টি কমে গেছে, বললেও ভুল হবে ঝিরি ঝিরি করে পড়ছে।আমাদের ট্রেন সন্ধ্যাতে হলেও গাড়ী কিভাবে পাব সেটি নিয়েই বেশ চিন্তাতে পরেছিলাম।কাল কিছুই গোছগাছ করতে পারিনি, সেই জন্য সকালে উঠে আগে ব্যাগ গুছিয়ে রাস্তায় নেমে এলাম।দেখলাম যে কয়েকটি গাড়ী যাচ্ছে সবই ভর্তি হয়ে আসছে।এভাবে আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা যায়। আমরা আশেপাশের লোকজনদেরকে জিগ্যাসা করাতে ওনারা বললেন এখানে যে গাড়ীর স্ট্যান্ড আছে সেখানে একটাও গাড়ী নেই।অনেকে বললেন আমরা যেন পুলিশ চৌকির দিকে এগিয়ে যাই, ওনারা একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আমরাও তাই করলাম, হাঁটতে থাকলাম পুলিশ চৌকির দিকে। প্রায় ১৫-২০ মিনিট হাটার পর আমরা পুলিশ চৌকির কাছে এলাম এবং ওনাদের সব ঘটনাটা জানালাম।দেখলাম অনেক গাড়ীই চোখের সামনে দিয়ে ভর্তি হয়ে চলে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর একটি ট্যাক্সি জাতিও গাড়ী ওনারা দাড় করালেন এবং আমরা উঠে পড়লাম।সেই ট্যাক্সিওয়ালাকে টাকার কথা জিগ্যাসা করাতে কোন দাবি করেননি। উনি শুধু বললেন, উনি দার্জিলিং যাবেন আর আমাদের জোড় বাংলো মোড়ে নামিয়ে দেবেন।আমরা ভাড়া হিসাবে অনাকে ২৫০/- টাকা দিলাম।
জোড় বাংলোতে নেমে আমরা প্রথমেই টিফিন করে নিলাম, কলা আর পাউরুটি সহযোগে। এখান থেকে শেয়ার গাড়ী, বাস ইত্যাদি গাড়ী যায় শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত। প্রায় ১ ঘণ্টার কাছাকাছি অপেক্ষা করার পর বাস এলো।ভিড় মোটামুটি।কোন রকমে উঠে পড়লাম। তবে বাসে দেখলাম পর্যটক থেকে লোকাল লোকজনই বেশী। তবে আমাদের পুরোটা পথ দাঁড়িয়েই আসতে হয়েছে। বাস আসার পথে এক জায়গায় টিফিন ও বাথরুমের জন্য আধ ঘণ্টা মত দাঁড়িয়ে ছিল।আমরাও সেই ফাঁকে অল্প করে কিছু খেয়ে নিলাম।বাস আবার চলতে থাকল। এই যাত্রায় আমাদের পাওনা হল শুধু বাসের জানলা থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী। বাস পাহাড় থেকে যখন সমতলে নেমে এলো তখন আমরা বসার জায়গা পেলাম। আর আধ ঘণ্টা লাগল আমাদের শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ডে আসতে। সেখান থেকে নেমে অটো পেলাম, নিল ৩০/- টাকা করে এনজেপি স্টেশন পর্যন্ত। তখন বাজে প্রায় ৫ঃ৩০ টা। আমাদের ট্রেন ছিল রাত ৮ঃ৩০ টায়। সিঁড়িতে বসলাম বড় প্লাস্টিক বিছিয়ে, এই ভাবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা মত কাটাতে হবে।ট্রেন দেওয়ার প্রায় ১ ঘণ্টা আগে আমরা রাতের খাওয়ার খেয়ে নিলাম। ট্রেন ঠিক সময় মতই দিল। পরদিন সকাল ৫ঃ৩০ টা নাগাদ আমরা শিয়ালদহ তে।আজই আবার অফিসে যেতে হবে।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন